পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধির ঘোষণা কিম জং উনের

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন চলতি বছরে পারমাণবিক শক্তি জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তিনি একটি পারমাণবিক উপকরণ উৎপাদন ঘাঁটি এবং পারমাণবিক অস্ত্র ইনস্টিটিউট পরিদর্শনকালে এই আহ্বান জানান। কিম বলেন, ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র-সংক্রান্ত পরিকল্পনা সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানিয়েছে, কিম জং উন পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন এবং সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে "উল্লেখযোগ্য সাফল্য" এবং "আশ্চর্যজনক উৎপাদন ফলাফল" বলে অভিহিত করেছেন। বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আগামী বছরগুলোর জন্য দেশটির সামরিক কৌশল আরও উন্নত করতে হবে।

কিম জং উন বলেন, "বিশ্বের সবচেয়ে অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। দীর্ঘমেয়াদী শত্রুতার কারণে পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।"

তিনি আরও বলেন, দেশটির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের প্রতিহত করতেই উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার সম্প্রসারণ করছে। ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের সময় যে দেশগুলো উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, সেসব দেশের হুমকি মোকাবিলার জন্য পারমাণবিক শক্তি বজায় রাখা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন কিম।

বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়া বর্তমানে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরির জন্য যথেষ্ট উপকরণ সংরক্ষণ করেছে। দেশটির সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব উদ্বিগ্ন থাকলেও, পিয়ংইয়ং বরাবরই যুক্তি দিয়ে আসছে যে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর উত্তর কোরিয়া একাধিকবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। সিউলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (NIS) তথ্য অনুযায়ী, এসব পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পরীক্ষা করা এবং ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে কিম জং উনের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেছেন, তিনি আবারও কিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আগ্রহী। তবে উত্তর কোরিয়া গত মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

কিম জং উনের সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উত্তর কোরিয়া ২০২৫ সালের মধ্যে তার পারমাণবিক শক্তি আরও শক্তিশালী করতে চায়। দেশটির বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছেন, এবং কিম তাদের আরও উৎসাহিত করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। পশ্চিমা বিশ্ব এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে দেশটির সামরিক কার্যক্রমের ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। তবে উত্তর কোরিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে যেকোনো মূল্যে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।